নটরাজ রহস্য

শান্ত করিতে নটরাজ লীলা,
আসিয়াছিল পার্বতী।
আঁখির মায়ায় বন্দী হয়েছেন মহাদেব।
মূগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন।
ধ্বংসলীলা স্তব্ধ হইয়া গেল।
থামিয়া গেল ঝড় তুফান।
কচি খোকনের মত মহাদেব আজ মহাসুখনিদ্রায় বন্দী।
হঠাৎ!!
ব্রহ্মা আসিলেন হিমালয় চূড়ায়।
পার্বতীকে সাজাইয়া দিলেন সন্ন্যাসিনীর বেশে।
পাঠাইয়া দিলেন বিষ্ণুর পদতলে।
আকাশ বাতাস স্বর্গতে লুটাইয়া কাঁদিয়াছিল পার্বতী।
ব্রহ্মার আদেশ।
তাই শান্ত হইলো ক্ষণকাল পরে।
মহাসুখ নিদ্রায় ভঙ্গ ঘটিলো শিবের!
শক্তদেহে সঞ্চারিত হইলো বিদ্যুৎ!
পার্বতী নেই! নেই!
হুংকারে কাঁপিয়া উঠিলো হিমালয়!
আবার শুরু হইলো ধ্বংসলীলা!
চলিছে তুফান, চলিছে ঝড়।
চলিছে ভূমিকম্প আর মরুঝড়!
পাগল হইয়াছেন আজ সত্য নটরাজ!
ক্ষণকাল পরে,
স্তব্ধ হইয়া কাঁদিলেন মহাদেব!
চিৎকার করিয়া ব্রহ্মাকে শুধালেন,
"কেন? কেন?"
কহিল ব্রহ্মা বিজ্ঞের ছলে,
"তোমায় করিতে শান্ত,
পাঠাইয়া ছিনু এমন পার্বতী,
আঁখি যার দিকভ্রান্ত!
মায়ার জাদুতে নটরাজ যবে
বন্দী হইলেন নিদ্রাতে,
শান্ত মেদিনী ভরিয়া গেল
লক্ষ দূরাত্মাতে!
নটরাজ করিতে উত্যক্ত,
আদেশ হইলো বিশ্বকর্মার।
নামিলাম আমি হিমালয় চূড়ায়।
কাড়িয়া লইলাম তোমার ভালবাসা!
তুমি নটরাজ, তুমি মহাভয়, তুমি আশা এ ধরিত্রীর।
তোমাতে কেন বাসা বাঁধিবে দোয়েল পাখির নীড়?"
নম: নম: করিয়া কাঁদিলেন মহাদেব।
কহিল,
"আমায় যদি চাও হতে নটরাজ,
তবে কেন পাঠাইয়া ছিলে এমন কাজলরাঙা মায়াজাল?!"
চুপ থাকিলেন ব্রহ্মা!
কাঁদিছেন মহাদেব।
এমন সময় ঘন মেঘের আড়াল হতে,
আসিল বিষ্ণুবাণী,
"যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল,
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
নটরাজদেহ শান্ত করিবো
স্নিগ্ধ প্রেমের মায়ায়।
যবে দূরাত্মাদের পাপের ঢিবি
ছড়াইয়া যাবে মেঘে,
প্রেমনিদ্রা ভাঙিয়া তুমি
উঠিয়া পড়িবে জেগে!
যুগযুগ ধরে চলিবে এ লীলা।
ইহাই আমার মধুর খেলা!
তোমাতে আসিবে যত যাতনা,
যত ক্রোধ, যত রাগ।
ঝাড়িয়া ফেলিবে ধ্বংসলীলায়।
ইহাই তোমার কাজ।"
মাথা উঠাইয়া দাঁড়াইলেন মহাদেব।
করিতে হইবে প্রলয়।
আজ জেগেছে বিদ্যুৎ যত
করিতে হইবে ক্ষয়!
মিলনের তরে প্রলয়ের খেলা খেলিছেন মহাদেব।
চলিছে সে খেলা,
চলিবে সে খেলা,
যতদিন আছে প্রেম!


Comments

Popular Posts